দেবারতি ভট্টাচার্য


লাকোতা উপজাতির মতে পৃথিবী তৈরির আগে দেবতারা থাকতেন অন্তরীক্ষে,আর মানুষ থাকত পৃথিবীর নিচে কোথাও। প্রধান দেবতা তাকুশকানশকান বা সূর্য বিয়ে করেছিলেন চাঁদকে। তাঁদের এক মেয়েও ছিল, ওশপে বা খসাতারা। বুড়ো আর বুড়ির মেয়ের নাম ছিল ইতে,তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বায়ুর। ইতে আর বায়ুর চার ছেলেই হলো চারদিক থেকে আসা চাররকম বাতাস। মাকড়শা ইঙ্কতোমি বুড়োবুড়িকে গিয়ে বলল
"তোমাদের মেয়ের সম্মান বাড়াতে চাও?তাহলে তাকুশকানশকানের সঙ্গে ওর প্রেমের ব্যবস্থা করতে হবে।"
ইতের সঙ্গে সূর্যদেবের প্রেম জমে উঠলো, ওদিকে চাঁদের সেটা এক্কেবারে পছন্দ হলোনা। চাঁদের সঙ্গে সূর্যের ঝগড়া হয়ে গেল, সূর্য আর চাঁদ আলাদা থাকা শুরু করলেন। এভাবেই দিনরাতের সৃষ্টি হলো। বুড়োবুড়ি আর ইতেকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো পৃথিবীতে। চাঁদ আর সূর্যের মেয়ে ওশপেও নেমে এলো পৃথিবীতে, থাকতে শুরু করলো দখিনা বাতাসের সঙ্গে। বায়ু তাঁর চার ছেলেকে নিয়ে থেকে গেলেন অন্তরীক্ষে,তাঁদের সঙ্গে থেকে গেলো ইতে আর সূর্যের অবৈধ সন্তান ঘূর্ণিবায়ু। তারা সবাই মিলে তৈরি করলো মহাকাশ। 
জনমানবহীন পৃথিবী বড়োই একঘেয়ে লাগছিল দেবতাদের,ইতে ইঙ্কতোমিকে বললেন
"যাও,দেখোতো কোথাও মানুষ পাও কিনা।"
ইঙ্কতোমি খুঁজতে খুঁজতে পৌছে গেলো পৃথিবীর নিচে মানুষদের গাঁয়ে। তাদের কাছে গল্প করলো পৃথিবীর সৌন্দর্যের কথা,ঐশ্বর্যের কথা। শেষপর্যন্ত তোকাহে বলে একজন মানুষ রাজি হলো পৃথিবীতে যেতে। ইঙ্কতোমির পিছন পিছন একটা গুহা বেয়ে সে উঠে এলো পৃথিবীতে। ইঙ্কতোমি তাকে দেখালো নীল আকাশ,সুবজ পৃথিবী, খাওয়ালো মোষের মাংস, দিলো কাপড় বোনা আর শিকারের উপকরণ। তোকাহের এতো ভালো লাগলো, যে সে মানুষদের গোটা গ্রামটাকেই ডেকে নিয়ে এলো ওপরে। এইবার এসে তারা দেখলো সবকিছু বদলে গেছে। আকাশ আর ততটা নীল নয়, পৃথিবী কম সবুজ,মোষের সংখ্যা কম, খাবার পেতে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কিন্তু তখন যে ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কী আর করে, পৃথিবীতেই নতুন করে জীবন শুরু হলো মানুষের। 

No comments:

Post a Comment