দেবর্ষি দাশগুপ্ত


ছেলেটা আজ একা একটা ঘরে পরে আছে। কোনো কিছু আর তেমন মনে করতে পারে না। নাওয়া নেই , খাওয়া নেই। সারাদিন বালিশটা আঁকড়ে ধরে আছে। শুধু টেবিলে সাজানো পড়ার বই গুলোকে দেখে যাচ্ছে অধীর ভাবে। তার কিছুক্ষণ পরেই কেঁপে উঠছে ছেলেটি থর থর করে। কোনো একটা প্রচন্ড ভয় যেন গ্রাস করেছে ওকে। হ্যা , ভয় , সত্যি একটা ভয় আজ ছিঁড়ে খাচ্ছে ওকে সবসময়। যেই বই আর পড়াশুনো ছিল ওর ভবিষ্যৎ , আজ সেটাই  কেড়ে নিয়েছে ওর অস্তিত্ব। একটা জ্যান্ত লাশ হয়ে পড়ে আছে ঘরের কোণে। আজ ওর সেই বই আর পড়াশুনাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ওর ভয়ের কারণ। আঁতকে উঠছে ও প্রতি মুহূর্ত। কেও যেন ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। চোখে মুখে আজ ওর মানসিক ভার সাম্যহীনের ছাপ। 

হ্যা , আজ ওর এটাই বাস্তব। এটাই চিরো সত্য। আজ ওর সব শেষ বয়স ২৩ বাবা-মায়ের এক মাত্র ছেলে নীলাদ্রি। নীলাদ্রি সান্যাল। পেশায় ম্যানেজমেন্টের ছাত্র ছিল সে। খুব ইচ্ছে ছিল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে ভালো একটা চাকরি করবে। তারপর বাবা-মা কে একটা ফ্ল্যাট বাড়ি কিনে দেবে। নিজের সখটাও খুব কম ছিল না। ভেবেছিল নিজের আয়ের টাকা দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ সাথে একটা ঝাঁ চকচকে চার চাকা গাড়ি কিনবে। কিন্তু সেটা যে ওর শুধু স্বপ্ন হয়ে থেকে যাবে ভাবতে পারেনি নীলাদ্রি আর তার বাবা-মা। মাঝারি মেধাবী নীলাদ্রি ম্যানেজমেন্ট প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভালো ফল করে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় একটি নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বাড়ি থেকে বহু মাইল দূরে সেই প্রতিষ্ঠান। অনেক আশা নিয়ে পারি দেয় নীলাদ্রি। কিন্তু কি এমন কি ঘোটলো ওর সাথে ? নতুন স্থান , নতুন ছেলে মেয়ে , নতুন পরিবেশ , নতুন মহল।  শুরু হোলো নীলাদ্রির পড়াশুনো। প্রথম বর্ষের ছাত্র নীলাদ্রি। অত্যাধুনিকতায় জম জমাট প্রতিষ্ঠান। নীলাদ্রির বিষয় গুলোকে মানিয়ে নেওয়াটা খুবই সমস্যা ছিল। কোনো রকম ভাবে দু তিনটে বন্ধু বান্ধবি হয়েছিল। কিন্তু ওর সাথে দু মাস ধরে চলতে থাকা কিছু ঘটনা ওলট পালট করে দিলো নীলাদ্রির জীবন। প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা চালাতে থাকে নির্মম , লজ্জাস্কর একেকটা অত্যাচার। কখনও তাকে উলঙ্গ করা হয় মেয়েদের হোস্টেলের সামনে , কখনও তাকে মদ পান করিয়ে বলা হয় শ্লীলতাহানি করতে , কখনও তাকে মারা হয় , কখনও তার খাবার কেড়ে নেওয়া হয় , কখনও তাকে ভারী বৃষ্টির মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ,  কখনও তাকে তার বান্ধবীর সামনে দাঁড় করিয়ে উলঙ্গ করে হস্তমৈথুন করতে বলা হয় আবার কখনও তার বই কাগজ পত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয় ইত্যাদি ইত্যাদি আরো নানান সব। এর সাথে চলতে থাকতো ওকে মেরে ফেলার হুমকি যাতে করে কাউকে এসব না বলতে পারে। নীলাদ্রির কাছে শুধু স্বপ্ন যেটা সে কোনো মতেই হারাতে চায় না। তাই নিশ্চুপ , নির্বোধ হয়ে থাকতে হোতো নীলাদ্রি কে। দিন দিন নীলাদ্রি হারিয়ে যেতে শুরু করে। সেটা তার সামান্য কিছু বন্ধুরা বুঝতে পেরেও নিরুপায় হয়ে ছিল। এরম ভাবে দুটো মাস কেটে যেতেই নীলাদ্রি পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আত্মহত্যার পথ অবলম্বন করে। গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পরে নিজেরই হোস্টেলর ঘরে। ভাগবানেরও কি ইচ্ছে দেখো। ১৫ মিনিট ধরে ঝুলে থেকেও মরেনি নীলাদ্রি। প্রাণটা তো বেঁচে গেল নীলাদ্রির। কিন্তু নীলাদ্রি যে সত্যি মোরে গেল। একটা জল জ্যান্ত লাশ হয়ে। আজ হয়তো ওরা কয়েদ খানায় বন্দি। কিন্তু নীলাদ্রি ? তাকে তো সারা জীবন কয়েদ হয়েই থাকতে হবে।

RAGGING IS A SERIOUS CRIMINAL OFFENCE. MAKE IT STOP. ITS STILL PERSIST IN MANY PARTS OF THE COUNTRY. STOP IT WHEN YOU WATCH IT.

No comments:

Post a Comment